(Go: >> BACK << -|- >> HOME <<)

বিষয়বস্তুতে চলুন

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন
অবস্থানবিনোদপুর, রাজবাড়ী
 বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৩°৪৫′৪৬″ উত্তর ৮৯°৩৮′৪৩″ পূর্ব / ২৩.৭৬২৮৯৪১° উত্তর ৮৯.৬৪৫২৩০২° পূর্ব / 23.7628941; 89.6452302
উচ্চতা১৩ মিটার
মালিকানাধীনবাংলাদেশ রেলওয়ে
পরিচালিতবাংলাদেশ রেলওয়ে
লাইনপোড়াদহ–কালুখালী-গোয়ালন্দ ঘাট লাইন
প্ল্যাটফর্ম
রেলপথব্রডগেজ
ট্রেন পরিচালকপশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে
নির্মাণ
গঠনের ধরনআদর্শ (ভূমিজ স্টেশন)
পার্কিংনাই
অন্য তথ্য
অবস্থাসক্রিয়
স্টেশন কোডআর বি
বিভাগ রেলওয়ে পাকশী বিভাগ
শ্রেণীবিভাগমানক
ইতিহাস
চালু১৮৭১; ১৫৩ বছর আগে (1871)
মূল কোম্পানিইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে
পরিষেবা
পূর্ববর্তী স্টেশন   বাংলাদেশ রেলওয়ে   পরবর্তী স্টেশন
সূর্যনগর   পোড়াদহ-কালুখালী-গোয়ালন্দ ঘাট লাইন   পাচুরিয়া জংশন
অবস্থান
মানচিত্র

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন হচ্ছে বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ীর বিনোদনপুর এলাকায় অবস্থিত একটি রেলওয়ে স্টেশন।[১] ১৮৭১ সালে রেলওয়ে স্টেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরিষেবা[সম্পাদনা]

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে যেসকল ট্রেন চলাচল করে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ঊনবিংশ শতাব্দিতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রেল কোম্পানি ভারতবর্ষে শুধু অর্থনৈতিক কাজের জন্য রেলপথ চালু করে। তখন থেকে রেলকে ঘিরেই রাজবাড়ী শহর গড়ে উঠেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ অঞ্চল বেশ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বর্তমান রাজবাড়ী জেলা শহরে রাজা সূর্যকুমারের কাচারির পাশে এই রাজবাড়ী রেলপথ ও স্টেশন নির্মিত হয়।

বাংলার রেল ভ্রমণ পুস্তকের (এল.এন. মিশ্র প্রকাশিত ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্যালকাটা ১৯৩৫) একশ নয় পৃষ্ঠায় রাজবাড়ী সম্বন্ধে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় যে, ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খান ঢাকায় সুবাদার নিযুক্ত হয়ে আসেন। এ সময় এ অঞ্চলে পর্তুগীজ জলদস্যুদের দমনের জন্যে তিনি সংগ্রাম শাহকে নাওয়ারা প্রধান করে পাঠান। তিনি বানিবহতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন এবং লালগোলা নামক স্থানে দুর্গ নির্মাণ করেন। এ লালগোলা দুর্গই রাজবাড়ী শহরের কয়েক কিলোমিটার উত্তরে বর্তমানে লালগোলা গ্রাম নামে পরিচিত। সংগ্রাম শাহ্ ও তাঁর পরিবার পরবর্তীতে বানিবহের নাওয়ারা চৌধুরী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এল.এন.মিশ্র উক্ত পুস্তকে উল্লেখ করেন যে, রাজা সংগ্রাম শাহের রাজ দরবার বা রাজকাচারী ও প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী অফিস বর্তমান রাজবাড়ী এলাকাকে কাগজে কলমে রাজবাড়ী লিখতেন (লোকমুখে প্রচলিত)। ঐ পুস্তকের শেষের পাতায় রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে রাজবাড়ী নামটি লিখিত পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য যে, রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনটি ১৮৭১ সালে স্থাপিত হয়। ঐতিহাসিক আনন্দনাথ রায় ফরিদপুরের ইতিহাস পুস্তকে বানিবহের বর্ণনায় লিখেছেন-নাওয়ারা চৌধুরীগণ পাঁচথুপি থেকে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে বানিবহে এসে বসবাস শুরু করেন। বানিবহ তখন ছিল জনাকীর্ণ স্থান। বিদ্যাবাগিশ পাড়া, আচার্য পাড়া, ভট্টাচার্য পাড়া, শেনহাটিপাড়া, বসুপাড়া, বেনেপাড়া, নুনেপাড়া নিয়ে ছিল বানিবহ এলাকা। নাওয়ারা চৌধুরীগণের বাড়ী স্বদেশীগণের নিকট রাজবাড়ী নামে অভিহিত ছিল।

রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ করা হয় ১৮৭১ সালে। বিভিন্ন তথ্য হতে জানা যায় যে, রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন এর নামকরণ রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে করার দাবি তোলা হলে বানিবহের জমিদারগণ প্রবল আপত্তি তোলেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে যে স্থানটিতে রাজবাড়ী রেল স্টেশন অবস্থিত উক্ত জমির মালিকানা ছিল বানিবহের জমিদারগণের। তাঁদের প্রতিবাদের কারণেই স্টেশনের নাম রাজবাড়ীই থেকে যায়।

১৮৮২ সালে ব্রিটিশ ভারত কলকাতাসহ পূর্বাঞ্চল বঙ্গ ও আসাম অঞ্চলে প্রশাসনিক, সামরিক, বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ ও যোগাযোগে উন্নতি ঘটাতে রেল পরিষেবার প্রচলন করা হয়েছিল। সে বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতা থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে রেলপথ উদ্বোধন করে। পরবর্তীতে এই লাইনকেই বর্ধিত করে ১৫ নভেম্বর ১৮৬২ সালে দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতী পর্যন্ত ৫৩.১১ কিমি ব্রডগেজ রেললাইনের একটি শাখা উন্মোচন করা হয়।

সেখান থেকে থেকে পদ্মার পাড় পর্যন্ত অর্থাৎ পদ্মা ও যমুনার সংযোগস্থলে অবস্থিত অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত ৭৫ কিমি দীর্ঘ রেললাইন উদ্বোধন করা হয় ১ জানুয়ারি ১৮৭১ সালে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ততকালীন ব্রিটিশ শাষণ আমলে কলকাতা ও পূর্ববঙ্গ (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ) অঞ্চলে বাণিজ্যিক প্রসারের স্বার্থে এই রেল র‍্যুটটিকে অন্যতম বিশেষ ও শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হত। বলা হয়ে থাকে, গোয়ালন্দ ঘাট থেকে রাজবাড়ী হয়ে দর্শনা রানাঘাট- এই একটি র‍্যুট ব্যবহার করে পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ ঢাকা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা কলকাতায় যাতায়াত করতেন বিভিন্ন কাচামাল কেনার জন্য। তখন অবশ্য বাংলার দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের বাসিন্দারা যাতায়াতের সুবিধা ও সময় সাশ্রয়ের কথা ভেবে ঢাকার চেয়ে কলকাতাকেই বেশি প্রাধান্য দিতেন। জানা গেছে, তখন কলকাতা-গোয়ালন্দঘাট এই র‍্যুটটিতে দুটি ট্রেন চলাচল করত। তাদের একটার নাম ছিল 'ঢাকা মেইল' অপরটির নাম ছিল 'ইস্ট বেঙ্গল এক্সপ্রেস'। গোয়ালন্দঘাট থেকে কলকাতা- এই পুরো যাত্রার সময় ছিল সব মিলিয়ে ৮ ঘন্টার মত। এদিকে কলকাতা/ দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের সাথে ঢাকা/পূর্ববঙ্গে যাতায়াত সহজতর করতে ট্রেনের সময়ের সাথে মিল রেখে গোয়ালন্দঘাটের সাথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দরগুলোতে সরাসরি স্টিমারে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়।

সে সময় গোয়ালন্দ ঘাট বাংলার জলপথের মধ্যে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কৌশলগত অবস্থান দখল করে নেয়, যার একটিমাত্র কারণ ছিল এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা।

তখন শুধু বাণিজ্যিক স্বার্থেই নয়, জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে সমন্বয় করে রেলকে জনপ্রিয় করার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে রেল কর্তৃপক্ষ। দিনাক সোহানী কবিরের লেখা ‘পূর্ববাংলার রেলওয়ের ইতিহাস ১৮৬২-১৯৪৭’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯২৭ সালের ১ অক্টোবর গোয়ালন্দ থেকে কলকাতা পর্যন্ত একটিবিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। পূজা উপলক্ষে ছিল এই ব্যবস্থা। গোয়ালন্দ থেকে কলকাতা পর্যন্ত ১২৮ মাইল দূরত্বের জন্য নামমাত্র ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। মাথাপিছু চার টাকা মাত্র। এই বিশেষ ট্রেনটি চারটি স্টেশনে থামার ব্যবস্থা রাখা হয়। উল্লেখ্য, এই র‍্যুটে মুসলিম ও হিন্দু তীর্থযাত্রীদের স্বার্থে প্রতিবছর রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদিনীপুর পর্যন্ত এখনও একটি বিশেষ ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রাজবাড়ী প্রতিনিধি (২০২০-০২-২৮)। "বিলুপ্তির পথে দেশের দ্বিতীয় রেলস্টেশনটি"আর টিভি অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৫ 
  2. "রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন"ভারতের রেলওয়ে তথ্য। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]