(Go: >> BACK << -|- >> HOME <<)

বিষয়বস্তুতে চলুন

বাল্মীকিপ্রতিভা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাল্মীকি-প্রতিভা
বাল্মীকিপ্রতিভা গীতিনাট্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ডানদিকে) ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী (বাঁদিকে)
লেখকরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দেশব্রিটিশ ভারত
ভাষাবাংলা
ধরননাটক, গীতিনাট্য
প্রকাশনার তারিখ
১৮৮১

বাল্মীকি-প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি গীতিনাট্য। ১৮৮১ সালে প্রকাশিত এই নাটকটি রবীন্দ্রনাথ রচিত প্রথম নাট্যসাহিত্য। ১৮৮১ সালেই প্রথম মঞ্চায়িত হয় এই নাটক। বাল্মীকি-প্রতিভা –র আখ্যানবস্তু কৃত্তিবাসি রামায়ণ থেকে গৃহীত। নাটকের আঙ্গিকে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সুর নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছে। এই নাটকের হাত ধরেই বাংলায় গীতিনাট্য ঐতিহ্যের সূচনা হয়। বাল্মীকি-প্রতিভা রচনার অব্যবহিত পরে এর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ কালমৃগয়া নামক আর একটি গীতিনাট্য রচনা করেছিলেন।

আখ্যানবস্তু[সম্পাদনা]

বাল্মীকি-প্রতিভা গীতিনাট্যের আখ্যানবস্তু কৃত্তিবাস বিরচিত বাংলা রামায়ণের সূচনাভাগ থেকে গৃহীত। এই কাহিনি মূল বাল্মীকি রামায়ণে পাওয়া যায় না। আবার নাট্যকার বাংলা রামায়ণ থেকেও হুবহু আখ্যানবস্তু গ্রহণ করেননি।

মহাকবি বাল্মীকি প্রথম জীবনে দস্যুসর্দার ছিলেন। অরণ্যে বাস করে দস্যুবৃত্তি করে জীবনধারণ করতেন তিনি। বনের মধ্যে তিনি নিষ্ঠাসহকারে নরবলি প্রদান করে দেবী কালীর পূজা করতেন। একদিন তার অনুচরেরা নরবলির জন্য এক বালিকাকে ধরে আনল। পূজা সমাপ্ত করে সেই বালিকাকে বলি দিতে যাবেন, এমন সময় বালিকার করুণ গান শুনে বিহ্বল হয়ে পড়লেন বাল্মীকি। অনুচরবর্গকে বালিকার বাঁধন খুলে মুক্তি দিতে আদেশ করলেন তিনি। তারপর শূন্যমনে বনপথে ঘুরতে লাগলেন। পরে দেখা গেল, বাল্মীকির অনুচরেরা তার আদেশের মর্ম অনুধাবন করতে না পেরে নিজেরাই পূজার আয়োজন করে বালিকাকে বলি দিতে উদ্যত। ক্রুদ্ধ বাল্মীকি তখন সেই পূজায় হস্তক্ষেপ করলেন এবং স্বহস্তে বালিকাকে মুক্ত করলেন।

এরপর মৃগয়ার আয়োজন করে বাল্মীকি তার অনুচরবর্গকে নিয়ে মৃগয়ায় গেলেন। কিন্তু তার এক অনুচর এক হরিণশাবককে হত্যা করতে গেলে দয়াপরবশ হয়ে তিনি বাধা দিলেন। এতে বাল্মীকির অনুচরবর্গ তাকে উন্মাদ মনে করে পরিত্যাগ করল। বাল্মীকি আবার শূন্যমনে বনে বনে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। একদিন এক ব্যাধকে ক্রৌঞ্চমিথুন বধ করতে দেখে শোকার্ত দস্যুসর্দারের মুখ দিয়ে নির্গত হল প্রথম শ্লোক:

মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।

এই শ্লোক উচ্চারণ করেই শিহরিত হলেন বাল্মীকি। নিজের অজান্তেই দস্যুপতি কীভাবে দেবভাষা উচ্চারণ করলেন তা বুঝতে পারলেন না। তখন তার সম্মুখে আবির্ভূত হন দেবী সরস্বতী। সরস্বতীর দর্শন পেয়ে দস্যুপতির পাষাণ হৃদয় বিগলিত হল। তিনি কালীপ্রতিমা পরিত্যাগ করলেন। সরস্বতী অন্তর্হিত হলে বাল্মীকি তার অনুসন্ধান করে ফিরতে লাগলেন। লক্ষ্মী তাকে ধনসম্পদের প্রলোভন দেখিয়েও ব্যর্থ হন। তখন তার ও বনদেবীদের করুণ প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে পুনরায় আবির্ভূত হলেন সরস্বতী। বাল্মীকি সঙ্গীতের মাধ্যমে তার বন্দনা করলে তিনি উত্তরে বললেন:

দীনহীন বালিকার সাজে,
এসেছিনু এ ঘোর বনমাঝে,
গলাতে পাষাণ তোর মন –
কেন বৎস, শোন্, তাহা শোন্।
আমি বীণাপাণি, তোরে এসেছি শিখাতে গান,
তোর গানে গলে যাবে সহস্র পাষাণপ্রাণ।
যে রাগিনী শুনে তোর গলেছে কঠোর মন,
সে রাগিনী তোর কণ্ঠে বাজিবে রে অনুক্ষণ।
বসি তোর পদতলে কবি-বালকেরা যত
শুনি তোর কণ্ঠস্বর শিখিবে সঙ্গীত কত।
এই নে আমার বীণা, দিনু তোরে উপহার
যে গান গাহিতে সাধ, ধ্বনিবে ইহার তার।
বাল্মিকী প্রতিভা পৃষ্ঠা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • চিরন্তন রবীন্দ্র রচনাবলী (সিডি-রম) (ভার্সন ২.০), সেলিয়াস টেকনোলজিস প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা
  • গীতবিতান (তৃতীয় খণ্ড), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা
  • জীবনস্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা
  • রবীন্দ্র-নাট্য-পরিক্রমা, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলকাতা
  • বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (চতুর্থ খণ্ড), সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]