(Go: >> BACK << -|- >> HOME <<)

বিষয়বস্তুতে চলুন

আরবি লিপিতে বাংলা লিখন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান)
১টি উৎস উদ্ধার করা হল ও ০টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল।) #IABot (v2.0.8.1
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
===১৯৪৭-এর পর নব্য পাকিস্তান শাসনামলে===
===১৯৪৭-এর পর নব্য পাকিস্তান শাসনামলে===
পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই নব্য পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের পক্ষে একদিকে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংহতির যুক্তি ছিল। বলা হচ্ছিল, [[উর্দু]] ছাড়া [[পশতু ভাষা|পশতু]], [[সিন্ধি ভাষা|সিন্ধি]], [[পাঞ্জাবি ভাষা]]য় আরবি হরফ যেহেতু ব্যবহৃত হচ্ছে—এখন বাংলায় এই হরফের প্রবর্তন করলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতি দৃঢ় হবে। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা সচিব বা শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=আলম|প্রথমাংশ1=এস. এম শামসুল |শিরোনাম=Governmentality and Counter-Hegemony in Bangladesh |তারিখ=2016 |প্রকাশক=স্প্রিংগার |আইএসবিএন=978-1-137-52603-8 |ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=A5ykCgAAQBAJ&pg=PT33&dq=bangla+in+arabic+alphabet&hl=bn&sa=X&ved=2ahUKEwiRpOHHi6HvAhWJWisKHUv9D8Q4ChDoATAAegQIBBAC#v=onepage&q=bangla%20in%20arabic%20alphabet&f=false |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |ভাষা=en}}</ref> এ বিষয়ে তিনি পূর্ব বাংলার শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে [[করাচি]]তে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে শিক্ষা সচিবের এ প্রস্তাব করেন। ১৯৪৯ সালের [[পেশোয়ার|পেশোয়ারে]] কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের সভায়ও আরবিকে পাকিস্তানের ভাষা সমূহের একমাত্র হরফ করার জোর সুপারিশ করা হয়। ফজলুর রহমান ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পেশোয়ারে পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, একই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পথে যেসব অসুবিধা আছে তার মধ্যে নানারকম হরফের সমস্যাটি অন্যতম। এ প্রসঙ্গে তিনি আরবি বর্ণমালার উপযোগিতার কথা বর্ণনা করেন। ১৯৪৮ সালের মার্চের ভাষা আন্দোলন স্তিমিত হয়ে এলেও [[পাকিস্তান সরকার|পাকিস্তান সরকারের]] আরবি হরফ প্রচলনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধ অব্যাহত থাকে। ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক সভায় আরবি হরফ প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। এ সভায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংসদ গঠন করা হয়। মো. নুরুল ইসলাম সভাপতি এবং ইলা দাশগুপ্তা ও আশরাফ সিদ্দিকী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচত হন। এছাড়া নজরুল ইসলাম, মমতাজ বেগম, রিজিয়া খাতুন, খলিলুর রহমানসহ অন্যদের নিয়ে বর্ণমালা সাব-কমিটি গঠিত হয়। এদিকে, ১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ বাজেট অধিবেশনের ২য় দিনে ছাত্র ফেডারেশনের একটি বিক্ষোভ মিছিল পরিষদ ভবনের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং আফজল হোসেন, মৃণালকান্তি বাড়রী, বাহাউদ্দীন চৌধুরী, ইকবাল আনসারী খান, আবদুস সালাম ও এ কে এম মনিরুজ্জামান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের জামিন না দিয়ে বন্দি রাখা হয়। ১৯৪৯ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ভাষা কমিটির পক্ষ থেকে নঈমুদ্দিন আহমদ সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন, "পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত লোকের হার শতকরা ১২ থেকে ১৫ জন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষিত লোকের হার শতকরা পাঁচ জনের কম; আরবি বর্ণমালার দোহাই দিয়ে এই ১৫ জন শিক্ষিতকে কলমের এক খোঁচায় অশিক্ষিতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। এর ফলে গোটা পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থাই বানচাল হয়ে যাবে।"<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=আরবি হরফ চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়া |ইউআরএল=https://www.ittefaq.com.bd/omor-ekushey/220631/আরবি-হরফ-চালুর-মূল-উদ্দেশ্য-ছিল-জাতিকে-পঙ্গু-করে-দেওয়া |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |কর্ম=[[দৈনিক ইত্তেফাক]] |তারিখ=৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১}}</ref> ১৯৫০ এর শতকে পূর্ব বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সমস্যার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠন করা হয় এবং এ বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। প্রকল্পের অংশ হিসেবে তারা ১৯৫০ সালে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় আরবি হরফে বাংলা শিক্ষার ২০টি কেন্দ্র স্থাপন করে।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=বাংলা হরফের ওপর শয়তানি আছর |ইউআরএল=https://www.banglanews24.com/opinion/news/bd/555426.details |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |কর্ম=[[banglanews24.com]] |তারিখ=২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ |ভাষা=bn}}</ref> ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে এটি ১৯৫৮ সালের আগে প্রকাশ করা হয়নি। এখানে ভাষা সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কার্যকর ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়। যেখানে তারা বাংলাকে আরবি হরফে মাধ্যমে লেখার সুপারিশ করেছিলেন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=আরবি হরফে বাংলা লেখার সুপারিশ ভাষা কমিটির |ইউআরএল=https://www.bhorerkagoj.com/print-edition/2015/02/09/18249.php |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |কর্ম=[[ভোরের কাগজ]] |তারিখ=৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ |আর্কাইভের-তারিখ=২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20191226111611/http://www.bhorerkagoj.com/print-edition/2015/02/09/18249.php |ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর }}</ref> ১৯৫০ সালে গণপরিষদে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে [[ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত]] প্রতিবাদ করে বাংলা ভাষাকে পাক-পরিষদের অন্যান্য ভাষার সহিত সমানাধিকার দানের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=ভাষা আন্দোলনের সেকাল একাল |ইউআরএল=https://www.jagonews24.com/opinion/article/645182 |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |কর্ম=[[jagonews24.com]] |তারিখ=২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ |ভাষা=bn}}</ref>
পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই নব্য পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের পক্ষে একদিকে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংহতির যুক্তি ছিল। বলা হচ্ছিল, [[উর্দু]] ছাড়া [[পশতু ভাষা|পশতু]], [[সিন্ধি ভাষা|সিন্ধি]], [[পাঞ্জাবি ভাষা]]য় আরবি হরফ যেহেতু ব্যবহৃত হচ্ছে—এখন বাংলায় এই হরফের প্রবর্তন করলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতি দৃঢ় হবে। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা সচিব বা শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=আলম|প্রথমাংশ1=এস. এম শামসুল |শিরোনাম=Governmentality and Counter-Hegemony in Bangladesh |তারিখ=2016 |প্রকাশক=স্প্রিংগার |আইএসবিএন=978-1-137-52603-8 |ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=A5ykCgAAQBAJ&pg=PT33&dq=bangla+in+arabic+alphabet&hl=bn&sa=X&ved=2ahUKEwiRpOHHi6HvAhWJWisKHUv9D8Q4ChDoATAAegQIBBAC#v=onepage&q=bangla%20in%20arabic%20alphabet&f=false |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |ভাষা=en}}</ref> এ বিষয়ে তিনি পূর্ব বাংলার শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে [[করাচি]]তে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে শিক্ষা সচিবের এ প্রস্তাব করেন। ১৯৪৯ সালের [[পেশোয়ার|পেশোয়ারে]] কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের সভায়ও আরবিকে পাকিস্তানের ভাষা সমূহের একমাত্র হরফ করার জোর সুপারিশ করা হয়। ফজলুর রহমান ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পেশোয়ারে পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, একই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পথে যেসব অসুবিধা আছে তার মধ্যে নানারকম হরফের সমস্যাটি অন্যতম। এ প্রসঙ্গে তিনি আরবি বর্ণমালার উপযোগিতার কথা বর্ণনা করেন। ১৯৪৮ সালের মার্চের ভাষা আন্দোলন স্তিমিত হয়ে এলেও [[পাকিস্তান সরকার|পাকিস্তান সরকারের]] আরবি হরফ প্রচলনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধ অব্যাহত থাকে। ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক সভায় আরবি হরফ প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। এ সভায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংসদ গঠন করা হয়। মো. নুরুল ইসলাম সভাপতি এবং ইলা দাশগুপ্তা ও আশরাফ সিদ্দিকী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচত হন। এছাড়া নজরুল ইসলাম, মমতাজ বেগম, রিজিয়া খাতুন, খলিলুর রহমানসহ অন্যদের নিয়ে বর্ণমালা সাব-কমিটি গঠিত হয়। এদিকে, ১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ বাজেট অধিবেশনের ২য় দিনে ছাত্র ফেডারেশনের একটি বিক্ষোভ মিছিল পরিষদ ভবনের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং আফজল হোসেন, মৃণালকান্তি বাড়রী, বাহাউদ্দীন চৌধুরী, ইকবাল আনসারী খান, আবদুস সালাম ও এ কে এম মনিরুজ্জামান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের জামিন না দিয়ে বন্দি রাখা হয়। ১৯৪৯ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ভাষা কমিটির পক্ষ থেকে নঈমুদ্দিন আহমদ সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন, "পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত লোকের হার শতকরা ১২ থেকে ১৫ জন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষিত লোকের হার শতকরা পাঁচ জনের কম; আরবি বর্ণমালার দোহাই দিয়ে এই ১৫ জন শিক্ষিতকে কলমের এক খোঁচায় অশিক্ষিতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। এর ফলে গোটা পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থাই বানচাল হয়ে যাবে।"<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=আরবি হরফ চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়া |ইউআরএল=https://www.ittefaq.com.bd/omor-ekushey/220631/আরবি-হরফ-চালুর-মূল-উদ্দেশ্য-ছিল-জাতিকে-পঙ্গু-করে-দেওয়া |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |কর্ম=[[দৈনিক ইত্তেফাক]] |তারিখ=৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১}}</ref> ১৯৫০ এর শতকে পূর্ব বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সমস্যার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠন করা হয় এবং এ বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। প্রকল্পের অংশ হিসেবে তারা ১৯৫০ সালে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় আরবি হরফে বাংলা শিক্ষার ২০টি কেন্দ্র স্থাপন করে।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=বাংলা হরফের ওপর শয়তানি আছর |ইউআরএল=https://www.banglanews24.com/opinion/news/bd/555426.details |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |কর্ম=[[banglanews24.com]] |তারিখ=২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ |ভাষা=bn}}</ref> ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে এটি ১৯৫৮ সালের আগে প্রকাশ করা হয়নি। এখানে ভাষা সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কার্যকর ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়। যেখানে তারা বাংলাকে আরবি হরফে মাধ্যমে লেখার সুপারিশ করেছিলেন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=আরবি হরফে বাংলা লেখার সুপারিশ ভাষা কমিটির |ইউআরএল=https://www.bhorerkagoj.com/print-edition/2015/02/09/18249.php |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |কর্ম=[[ভোরের কাগজ]] |তারিখ=৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ |আর্কাইভের-তারিখ=২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20191226111611/http://www.bhorerkagoj.com/print-edition/2015/02/09/18249.php |ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর }}</ref> ১৯৫০ সালে গণপরিষদে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে [[ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত]] প্রতিবাদ করে বাংলা ভাষাকে পাক-পরিষদের অন্যান্য ভাষার সহিত সমানাধিকার দানের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=ভাষা আন্দোলনের সেকাল একাল |ইউআরএল=https://www.jagonews24.com/opinion/article/645182 |সংগ্রহের-তারিখ=৮ মার্চ ২০২১ |কর্ম=[[jagonews24.com]] |তারিখ=২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ |ভাষা=bn}}</ref>
==আরও দেখুন==
* [[আরবিকরণ]]


==তথ্যসূত্র==
==তথ্যসূত্র==

০০:০২, ২১ নভেম্বর ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আরবি হরফে বাংলা লিখন বলতে আরবি বা উর্দু বর্ণের মাধ্যমে বাংলা ভাষা লিখাকে বোঝায়। নবাবি আমলে বাংলায় এই পদ্ধতিতে লিখন সীমিত আকারে প্রচলিত ছিল। পাকিস্তান গঠনের পর পূর্ব বাংলায় এই লিখন পদ্ধতিটি আবার রাজনৈতিকভাবে আলোচনায় আসে।[১]

ইতিহাস

১৯৪৭-এর পর নব্য পাকিস্তান শাসনামলে

পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই নব্য পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের পক্ষে একদিকে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংহতির যুক্তি ছিল। বলা হচ্ছিল, উর্দু ছাড়া পশতু, সিন্ধি, পাঞ্জাবি ভাষায় আরবি হরফ যেহেতু ব্যবহৃত হচ্ছে—এখন বাংলায় এই হরফের প্রবর্তন করলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতি দৃঢ় হবে। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা সচিব বা শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান।[২] এ বিষয়ে তিনি পূর্ব বাংলার শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে করাচিতে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে শিক্ষা সচিবের এ প্রস্তাব করেন। ১৯৪৯ সালের পেশোয়ারে কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের সভায়ও আরবিকে পাকিস্তানের ভাষা সমূহের একমাত্র হরফ করার জোর সুপারিশ করা হয়। ফজলুর রহমান ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পেশোয়ারে পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, একই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পথে যেসব অসুবিধা আছে তার মধ্যে নানারকম হরফের সমস্যাটি অন্যতম। এ প্রসঙ্গে তিনি আরবি বর্ণমালার উপযোগিতার কথা বর্ণনা করেন। ১৯৪৮ সালের মার্চের ভাষা আন্দোলন স্তিমিত হয়ে এলেও পাকিস্তান সরকারের আরবি হরফ প্রচলনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধ অব্যাহত থাকে। ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক সভায় আরবি হরফ প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। এ সভায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংসদ গঠন করা হয়। মো. নুরুল ইসলাম সভাপতি এবং ইলা দাশগুপ্তা ও আশরাফ সিদ্দিকী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচত হন। এছাড়া নজরুল ইসলাম, মমতাজ বেগম, রিজিয়া খাতুন, খলিলুর রহমানসহ অন্যদের নিয়ে বর্ণমালা সাব-কমিটি গঠিত হয়। এদিকে, ১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ বাজেট অধিবেশনের ২য় দিনে ছাত্র ফেডারেশনের একটি বিক্ষোভ মিছিল পরিষদ ভবনের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং আফজল হোসেন, মৃণালকান্তি বাড়রী, বাহাউদ্দীন চৌধুরী, ইকবাল আনসারী খান, আবদুস সালাম ও এ কে এম মনিরুজ্জামান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের জামিন না দিয়ে বন্দি রাখা হয়। ১৯৪৯ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ভাষা কমিটির পক্ষ থেকে নঈমুদ্দিন আহমদ সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন, "পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত লোকের হার শতকরা ১২ থেকে ১৫ জন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষিত লোকের হার শতকরা পাঁচ জনের কম; আরবি বর্ণমালার দোহাই দিয়ে এই ১৫ জন শিক্ষিতকে কলমের এক খোঁচায় অশিক্ষিতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। এর ফলে গোটা পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থাই বানচাল হয়ে যাবে।"[৩] ১৯৫০ এর শতকে পূর্ব বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সমস্যার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠন করা হয় এবং এ বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। প্রকল্পের অংশ হিসেবে তারা ১৯৫০ সালে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় আরবি হরফে বাংলা শিক্ষার ২০টি কেন্দ্র স্থাপন করে।[৪] ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে এটি ১৯৫৮ সালের আগে প্রকাশ করা হয়নি। এখানে ভাষা সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কার্যকর ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়। যেখানে তারা বাংলাকে আরবি হরফে মাধ্যমে লেখার সুপারিশ করেছিলেন।[৫] ১৯৫০ সালে গণপরিষদে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রতিবাদ করে বাংলা ভাষাকে পাক-পরিষদের অন্যান্য ভাষার সহিত সমানাধিকার দানের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।[৬]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. জাফললোট, ক্রিস্টোফ (২০০৪)। A History of Pakistan and Its Origins (ইংরেজি ভাষায়)। অ্যান্থেম প্রেস। পৃষ্ঠা ৪৬। আইএসবিএন 978-1-84331-149-2। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১ 
  2. আলম, এস. এম শামসুল (২০১৬)। Governmentality and Counter-Hegemony in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। স্প্রিংগার। আইএসবিএন 978-1-137-52603-8। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১ 
  3. "আরবি হরফ চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়া"দৈনিক ইত্তেফাক। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১ 
  4. "বাংলা হরফের ওপর শয়তানি আছর"banglanews24.com। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১ 
  5. "আরবি হরফে বাংলা লেখার সুপারিশ ভাষা কমিটির"ভোরের কাগজ। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১ 
  6. "ভাষা আন্দোলনের সেকাল একাল"jagonews24.com। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১